শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ১৯ বৈশাখ, ১৪৩২
Live TV
সর্বশেষ

পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে আফগানিস্তানকে কাছে টানছে ভারত

জনতার ইশতেহার ডেস্ক
১ মে, ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ণ
পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে আফগানিস্তানকে কাছে টানছে ভারত
১ মে, ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ণ

জই২৪ ডটকম ফটো

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলার বদলা নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। এর মধ্যেই সামনে এসেছে আরও একটি জল্পনা। অনেকে বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে ‘টু ফ্রন্ট ওয়ার’-এর পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি। আর সেই লক্ষ্যে আফগানিস্তানকে পাশে পেতে চাইছে মোদি সরকার। ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই এই খবর জানিয়েছে। গত রোববার আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রতিনিধি তথা যুগ্ম সচিব আনন্দ প্রকাশ।

কাবুলে সেখানকার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পেহেলগামে হামলার ছয় দিনের মাথায় তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে আনন্দ প্রকাশের এই বৈঠককে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আনন্দ প্রকাশ বর্তমানে আফগানিস্তান, ইরান এবং পাকিস্তান ডেস্কের ডিরেক্টর জেনারেলের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন।

তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকের পর অবশ্য প্রকাশ্যে কোনো বিবৃতি দেননি তিনি। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বৈঠকের কথা স্বীকার করে জানানো হয়েছে, পরিকাঠামোগত বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের ব্যাপারে তাদের আলোচনা হয়েছে।

২০২১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো তালেবান নেতৃত্ব আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর সেখানে আগে থেকে চলে আসা বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয় নয়াদিল্লি। মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠকে সেগুলো পুনরায় চালু করার ব্যাপারে আনন্দ প্রকাশ জোর দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম। অন্যদিকে, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী এবং অসুস্থদের ভিসা দেওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির অনুরোধ করেন তালেবান মন্ত্রী। বৈঠক নিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে আফগানিস্তান জানিয়েছে, দ্বি-পাক্ষিক রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছেন তারা।

আর এই জায়গাতেই দানা বেঁধেছে সন্দেহ। পাকিস্তানের সঙ্গে ‘ডুরান্ড লাইন’কে কেন্দ্র করে আফগানিস্তানের বিবাদ রয়েছে। একে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বলে মানতে নারাজ কাবুল। এর জেরে ইসলামাবাদের সঙ্গে সংঘাত লেগেই রয়েছে কাবুলের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছে নয়াদিল্লি।

গত কয়েক বছর ধরেই আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সক্রিয় রয়েছে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান বা টিটিপি নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে একরকম যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা। কাশ্মীর ইস্যুতেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পুরোপুরি উল্টো অবস্থান নিতে দেখা গেছে টিটিপিকে।

ইসলামাবাদের অভিযোগ, টিটিপিকে আশ্রয়, হাতিয়ার এবং মদত দিচ্ছে আফগানিস্তানের তালেবান। কারণ, ‘ডুরান্ড লাইন’-এর আন্তর্জাতিক সীমান্ত বদল করতে চায় তারা। যদিও পাকিস্তানের এই কথা মানতে নারাজ কাবুলের শাসকরা। উল্টে প্রতিবেশী দেশটিকে ‘সন্ত্রাসের ‘অভয়ারণ্য’ বলে বার বার উল্লেখ করে এসেছে তারা।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাদের পক্ষে ‘প্রত্যাঘাত’ বেশ কঠিন। কিন্তু আফগানিস্তান সীমান্তে অশান্তি তৈরি হলে সেনাবাহিনীকে সেদিকে সরাতে বাধ্য হবে পাকিস্তান। তখন ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা ‘এয়ার স্ট্রাইক’-এর মতো সুযোগ পাবে ভারত। অনেকের ধারণা, সেই কথা মাথায় রেখে তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লি।

অনেক বিশ্লেষক অবশ্য মনে করেন, ভারতের জন্য সরাসরি ইসলামাবাদের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষে জড়াবে না তালেবান। তবে এই ব্যাপারে টিটিপিকে সামনে ঠেলে দিতে পারে তারা। কারণ, কাবুল মুখে অস্বীকার করলেও আফগানিস্তানের পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে খাইবার পাখতুনখোয়ার এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর একাধিক ঘাঁটি। সেখান থেকে গেরিলা কায়দায় হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের বড় ক্ষতি করতে সক্ষম তারা।

জই২৪ ডটকম/আন্তর্জাতিক