সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ২ আষাঢ়, ১৪৩২
Live TV
সর্বশেষ

তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে: বিআইডিএসের সম্মেলন

জনতার ইশতেহার ডেস্ক
৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ণ
তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে: বিআইডিএসের সম্মেলন
৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

বিআইডিএসের চারদিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে উপস্থিত বক্তারা। -সংগৃহীত ছবি

দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। ২০১৪ সালে দেশের এই খাতের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৫৬ শতাংশ; ২০২৩ সালে যা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত চার দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাক খাতের বেশির ভাগ উপখাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। এই খাতের আটটি উপখাতের মধ্যে ছয়টিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে; বেড়েছে মাত্র দুটিতে।

টেকনোলজি আপগ্রেডেশন অব দ্য আরএমজি ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক উপস্থাপনায় বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল দেখিয়েছেন, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকের উপখাতগুলোর মধ্যে শুধু হোম টেক্সটাইল ও ওভেন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাকি ছয়টি খাত অর্থাৎ নিট লিনজারি, ডেনিম ট্রাউজার, সোয়েটার, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওভেন ট্রাউজার ও ওভেন শার্টে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে জ্যাকেটে। এই উপখাতে ২০১৪ সালে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সাজ্জাদ জহির। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন।

উপস্থাপনায় বলা হয়, তৈরি পোশাক খাত গত ১০ বছরে অনেক বেশি পুঁজিঘন হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিকপ্রতি যন্ত্রের সংখ্যা কমেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মেশিন অপারেটর ও হেলপারদের ওপর। সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে।

নারী শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে যে আরেকটি পরিবর্তন গত ১০ বছরে হয়েছে, তা হলো উৎপাদন খাতে প্রযুক্তি জানা মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। এই খাতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা টেক্সটাইল প্রকৌশলী বেড়েছে। কিন্তু টেক্সটাইল প্রকৌশলে নারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। এ ছাড়া বিএসসি শিল্প প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর সংখ্যা বেড়েছে। ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর পেশা তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে এই খাতে সম্প্রতি কয়েক বছরে নারীরা এসেছেন। এই খাত গত ১০ বছরে অনেক বড় হয়েছে বলে নন-টেকনিক্যাল মানুষের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে—নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

প্রশ্নোত্তর পর্বে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, এই যে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, এর সামাজিক প্রভাব আছে। বিষয়টি কি একেবারে বাজারের হাতে দেওয়া হবে, নাকি এখানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই প্রশ্নের উত্তরে কাজী ইকবাল বলেন, নারীরা কোথায় কোথায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সমস্যার মুখে পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে তাঁদের নতুন দক্ষতা শেখানো দরকার। তাহলে নারীদের এই ঝরে পড়ার হার রোধ করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের গবেষক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, দেশে এই মুহূর্তে প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের ছাঁটাই হচ্ছে, তা নয়। এর প্রভাব আছে। চীনের একটি গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, চীনে প্রযুক্তির কারণে ৩ শতাংশ ছাঁটাই হলেও ২ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সবখানেই থাকবে। ফলে দরকার হচ্ছে, নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বা তাঁদের নতুন দক্ষতা শেখানো, এবং প্রয়োজনবোধে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া।

প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কত মানুষের কাজ যাবে
সকালের অধিবেশনে আরেকটি গবেষণাপত্র ছিল উৎপাদন খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রভাব নিয়ে। উপস্থাপনা করেন বিআইডিএসের গবেষণা সহযোগী ফারহিন ইসলাম। উৎপাদন খাতে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়লে কর্মসংস্থানে কী প্রভাব পড়বে, তার একটি তুলনামূলক চিত্র দেখান তিনি।

সলো গ্রোথ মডেল ব্যবহার করে ফারহিন ইসলাম দেখান, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়লে বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে ১৮ লাখ কর্মীর কাজ চলে যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে। এই খাতে ১০ লাখ মানুষের কাজ চলে যেতে পারে।

শুধু তৈরি পোশাক খাত নয়, কোন খাতে ও কোন এলাকায় কত মানুষের কাজ চলে যেতে পারে, তারও সম্ভাব্য হিসাব দেওয়া হয় এই গবেষণাপত্রে।
তবে কর্মসংস্থান হ্রাসের এই হিসাব করা হয়েছে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির হার ধ্রুব রেখে। এই খাতের ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও নতুন যত কর্মসংস্থান হবে, তা ছাঁটাইয়ের চেয়ে বেশি। ফারহিন আরও বলেন, ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে উৎপাদন খাতে ২০ লাখ কর্মসংস্থান হবে।

ফারহিন ইসলাম আরও বলেন, যেসব খাতে প্রযুক্তি ব্যবহার হবে মানব শ্রমের সহায়ক শক্তি হিসেবে, সেসব খাতে ছাঁটাই হবে কম। আর যেখানে মানব শ্রমের বিকল্প হিসেবে প্রযুক্তির ব্যবহার হবে, সেখানে ছাঁটাই হবে বেশি।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

জই২৪ ডটকম/অর্থনীতি