শনিবার, ৭ জুন, ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
Live TV
সর্বশেষ

শেখ মুজিবসহ জাতীয় চার নেতা মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম

জনতার ইশতেহার ডেস্ক
৪ জুন, ২০২৫, ৮:৪৩ অপরাহ্ণ
শেখ মুজিবসহ জাতীয় চার নেতা মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম
৪ জুন, ২০২৫, ৮:৪৩ অপরাহ্ণ

জই২৪ ডটকম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’— এমনটাই জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বীর প্রতীক ফারুক-ই-আজম। এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে সেই সরকারের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।”

এর আগে মঙ্গলবার (৩ জুন) ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয়ের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে একটি সংশোধিত অধ্যাদেশ জারি করে বর্তমান সরকার। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এখন থেকে শুধু তারাই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন, যারা ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ যারা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং ফ্রন্ট লাইনে ছিলেন। যারা যুদ্ধ করেননি, তবে মুক্তিযুদ্ধে নানা মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন—তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।

সরকার বলেছে, এই শ্রেণিবিন্যাসের ফলে কারও সুযোগ-সুবিধায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। অর্থাৎ ‘সহযোগী’দের আগের মতোই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সম্মান থাকবে।

অধ্যাদেশে বিস্তারিত বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন তারাই, যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রশিক্ষণ নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করেছেন।

এর মধ্যে আছেন— মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধা, ইপিআর, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, কিলো ফোর্স, নৌ কমান্ডো, আনসার ও মুজিবনগর সরকারের স্বীকৃত যোদ্ধা।

এছাড়া যেসব নারী পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, অর্থাৎ ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে পরিচিত, তারাও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’র মর্যাদা পাবেন। যুদ্ধের সময় যারা ফিল্ড হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স বা চিকিৎসা-সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন, তারাও ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃত থাকবেন।

অন্যদিকে, যারা যুদ্ধক্ষেত্রে যাননি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন—তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হবে। অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’র সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যারা প্রবাসে বা দেশে অবস্থান করে যুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করেছেন, মনোবল জুগিয়েছেন, সাংস্কৃতিক বা কূটনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছেন—তারা এই শ্রেণিতে পড়বেন।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— প্রবাসে অবস্থানকারী বাংলাদেশি পেশাজীবী, যারা বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মত গঠন করেছেন, মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দূত, ওই সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও সহকারী কর্মীরা, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী এমএনএ ও এমপিএ, যারা পরবর্তীতে গণপরিষদ সদস্য হয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলী, দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা।

অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এসব শ্রেণির মানুষ আর ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হবেন না। তবে তারা এখন থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘সহযোগী’ শব্দটি যুক্ত হলেও কেউ তাদের অবদানের গুরুত্ব হারাচ্ছেন না। শুধু মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীদের ভূমিকার মধ্যে একটি স্পষ্ট বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।

সরকার বলছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতেই সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়েছে। এখন থেকে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, তারা হবেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’। আর যারা বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, তারা থাকবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে। চূড়ান্তভাবে নতুন তালিকা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এদিকে, মঙ্গলবারই শোনা যায় শেখ মুজিবসহ জাতীয় চার নেতা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন না, তারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা। এ নিয়ে গতকাল থেকেই ব্যাপক সমালোচনা সামাজিক মাধ্যমসহ সবখানে। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা সেই বিতর্কের ইতি টানলেন।

জই২৪ ডটকম/জাতীয়