মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোগীর সংজ্ঞা নিয়ে নতুন অধ্যাদেশে কী বলা হয়েছে?

জনতার ইশতেহার ডেস্ক
প্রকাশের সময়: বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫ । ৮:২৭ অপরাহ্ণ

জই২৪ ডটকম

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার (৩ জুন) রাতে এই অধ্যাদেশ জারির পর এ নিয়ে বির্তক ওঠেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাশাপাশি কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরেই মূলত এই বিতর্কের সূত্রপাত। যেখানে দাবি করা হয়, ‘শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে।’

আদতে বিষয়টি তেমন নয়। সংশোধিত অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকার এবং উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনীকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সে হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন। এছাড়া, জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মো. মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানসহ মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন স্বাক্ষরিত সংশোধিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি সহযোগীর সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কারা?

অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করিয়া ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করিয়াছিলেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে; এবং সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও উক্ত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্য এবং বাংলাদেশের নিম্নবর্ণিত নাগরিকগণও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হইবেন।’

হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক নির্যাতিত নারী বা বীরাঙ্গনারাও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা-সহকারীরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আহত কিংবা শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন।

যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ চলাকালে নিহত হয়েছেন সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদেরকে বলা হবে ‘শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা’।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবার বলতে বুঝাবে কোনো মুক্তিযোদ্ধার স্বামী বা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা ও মাতা।

সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা কারা?

সংশোধিত অধ্যাদেশে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যাহারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে যেসব বাংলাদেশের নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করিয়াছেন।’ যথা—

ক) যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন।

খ) যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত এবং ওই সরকারের নিয়োগ করা চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

গ) মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ; এবং যারা পরে গণপরিষদের সদস্য গণ্য হয়েছিলেন।

ঘ) স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক।

ঙ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

সংজ্ঞা অনুযায়ী যারা সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন, তাদের স্বামী বা স্ত্রী, পুত্র, কন্যা, পিতা ও মাতা মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

সংশোধনীতে ফিরলো ’৭২ এর সংজ্ঞা:

মূলত, নতুন অধ্যাদেশে আগের আইনের ১০টি ধারায় বেশ কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশের আরও কিছু সংজ্ঞায়ও আনা হয়েছে পরিবর্তন।

এই অধ্যাদেশের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম জানিয়েছেন, ১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা ছিল সেটাই তারা বাস্তবায়ন করেছেন। ২০১৮ ও ২০২২ সালে এটা পরিবর্তন করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দুইয়েরই সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞা হিসেবে অধ্যাদেশে বলা হয়, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস্, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধ।

জই২৪ ডটকম/জাতীয়

সম্পাদক : মাহাবুর রহমান আঙ্গুর, নির্বাহী সম্পাদক : প্রদীপ রায় জিতু। রাকিবা টাওয়ার (৩য় তলা), বীরগঞ্জ, দিনাজপুর। ফোন : +৮৮০৯৬১৩৪৪৪৪৩৩, ই-মেইল : info@localhost. কপিরাইট © উত্তরের কণ্ঠ সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন